ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা ব্যকরণ ও নির্মিতি - নির্মিতি | | NCTB BOOK

ভূমিকা : মানবজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে ছাত্রজীবন। এ সময় যেভাবে নিজেকে গড়ে তোলা হয়, সারাজীবন সে রকম ফল পাওয়া যায়। ছাত্রজীবনকে বলা হয় প্রস্তুতির জীবন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ করে নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হয় এই ছাত্রজীবনেই। সুতরাং বৃহত্তর জীবনের পটভূমিতে ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক।

 

ছাত্রজীবন : কবি সুনির্মল বসু বলেছেন :

                      বিশ্ব-জোড়া পাঠশালা মোর

                                        সবার আমি ছাত্র,

                        নানান ভাবের নতুন জিনিস

                                        শিখছি দিবারাত্র।

মানুষ সারাজীবন কিছু না কিছু শেখে। তাই বৃহত্তর অর্থে মানুষের গোটা জীবনটাই ছাত্রজীবন। কিন্তু ছাত্রজীবন বলতে আমরা বুঝি, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনকে। জীবন গঠনের জন্য মানুষকে একটি বিশেষ সময়ে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের এই সময়টুকুই মানুষের ছাত্রজীবন।

 

ছাত্রজীবনের লক্ষ্য : ‘ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ' – অধ্যয়নই হচ্ছে ছাত্রদের একমাত্র তপস্যা। ছাত্রজীবনের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হলো অধ্যয়ন ও জ্ঞানঅর্জন। ছাত্র-ছাত্রীদের কঠোর পরিশ্রম ও তপস্যার মাধ্যমে জ্ঞানঅর্জনে আত্মনিয়োগ করতে হবে। ভবিষ্যতে দেশ ও জাতিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার গুরুদায়িত্ব তাদের ওপরই অর্পিত হবে। সে গুরুদায়িত্ব বহন করার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।

 

ছাত্রজীবনের কর্তব্য : জ্ঞানার্জনে আত্মনিয়োগই একজন ছাত্রের প্রধান কর্তব্য। এজন্য একজন শিক্ষার্থীকে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে আরও অনেক বেশি পড়াশোনা করতে হয়। আর এভাবেই প্রকৃত জ্ঞানার্জনের সাথে সাথে তাকে মানব-চরিত্রের নানাবিধ সৎ-গুণাবলিও অর্জন করতে হয়। যেমন :

১. চরিত্রগঠন : “চরিত্র হচ্ছে মানবজীবনের মুকুট স্বরূপ।” ছাত্রদের একটি প্রধান কাজ হলো চরিত্র গঠন ৷ তাই এ সময় প্রত্যেক ছাত্রেরই সত্যবাদিতা, সহানুভূতি, সহযোগিতা, পরোপকার, উদারতা, ধৈর্য, সংযম, দেশপ্রেম প্রভৃতি সদ্‌গুণ আয়ত্ত করতে হবে। সব রকম অসদ্‌গুণ ও বদ-অভ্যাস থেকে দূরে থাকাও একজন ছাত্রের অন্যতম কর্তব্য।

২. নিয়মানুবর্তিতা : শৃঙ্খলা ছাড়া মানবজীবন সুন্দরভাবে গড়ে উঠতে পারে না। এই শৃঙ্খলা বা নিয়মানুবর্তিতা ছাত্রজীবনেই অর্জন করতে হয়। এ গুণ অর্জনের ওপর তার ভবিষ্যতের সাফল্য নির্ভর করে।

৩. সময়ানুবর্তিতা : সময়নিষ্ঠা একটি বড় গুণ। যে মানুষ সময়ের মূল্য দিতে জানে না, সে জীবনে উন্নতি করতে পারে না। তাই ছাত্রজীবন থেকেই সময়নিষ্ঠার অভ্যাস করতে হবে, সময়ের মূল্য দিতে হবে।

৪. অধ্যবসায় : ছাত্রদের অলসতা ত্যাগ করে পরিশ্রমী হতে হবে। দেখা যায় অনেক মেধাবী ছাত্রও অলসতার কারণে পরীক্ষায় ভালো ফল করতে ব্যর্থ হয়। আবার অনেক কম মেধার ছাত্র শুধু অধ্যবসায় ও পরিশ্রম দ্বারা আশাতীত সাফল্য অর্জন করে চমক সৃষ্টি করে। তাই ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম।

৫. খেলাধুলা ও ব্যায়াম : স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। আর সুস্থ শরীরে বাস করে সুস্থ মন। শরীর সুস্থ না থাকলে নিয়মিত লেখাপড়া হয় না। তাই শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য ছাত্রদের নিয়মিত খেলাধুলা ও ব্যায়াম করা খুব জরুরি।

৬. সহ-শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ : ছাত্রদের লেখাপড়ার পাশাপাশি অন্যান্য সহ-শিক্ষা কার্যক্রমেও অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। বিতর্ক প্রতিযোগিতা, উপস্থিত বক্তৃতা, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, গান, নাচ, অভিনয় ইত্যাদিতেও তাকে অংশ নিতে হবে।

 

ছাত্রজীবনের দায়িত্ব : ছাত্রজীবনের দায়িত্বের দুটি দিক রয়েছে। একটি হচ্ছে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলা, অপরটি হচ্ছে দেশ ও জাতির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। নিজেকে যোগ্য করে তোলার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারলেই ব্যক্তি ও জাতি উভয়েরই কল্যাণ হয়। ছাত্ররা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার, আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক; শিক্ষা ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক । তাই জাতীয় উন্নয়নে সচেতন নাগরিক হিসেবে ছাত্রদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। অতীতে জাতির সংকটকালে ছাত্রসমাজই অগ্রবর্তী চিন্তার পথিকৃৎ হয়ে এগিয়ে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রসমাজের অংশগ্রহণ ছিল খুবই উল্লেখযোগ্য। ভবিষ্যতেও জাতির সংকটে-সমস্যায় ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার কাজে ছাত্রসমাজকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

প্রত্যেক ছাত্রকেই মাতাপিতার প্রতি শ্রদ্ধা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি ভালোবাসা, পাড়া-প্রতিবেশীদের প্রতি সৌজন্য প্রকাশ করতে হবে। সহপাঠীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে। শিক্ষক-গুরুজনদের সম্মান করতে হবে। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার সঙ্গে প্রীতি ও ঐক্য বজায় রাখতে হবে।

 

উপসংহার : মানুষের ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি গঠিত হয় ছাত্রজীবনে। আবার দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে ছাত্রদের ওপর। তাই ছাত্রজীবনের কর্তব্য ও দায়িত্ব ঠিকভাবে উপলব্ধি করে তা যথাযথভাবে পালন করা প্রতিটি ছাত্রেরই উচিত। এতে দেশ ও জাতির কল্যাণ এবং উন্নতি সাধন হয়।

Content added || updated By
Promotion